মোঃ রাকিবুল হাসান মিঠু,মধুখালী প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি অপহরণ মামলাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য ঘুরপাক খাচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, হাসিব ও শ্রাবণী আক্তার পরিবারের অজান্তে পালিয়ে গিয়ে নিজ ইচ্ছায় কোর্ট এফিডেভিটের মাধ্যমে গত পহেলা এপ্রিল ২০২৫ তারিখে তিন লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিবাহ করেন।
ঈদুল ফিতরের দিন মেয়েকে বাড়িতে না পেয়ে শ্রাবণীর মা ডালিয়া আক্তার ও পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে জানতে পারেন, মেয়ে পালিয়ে গিয়ে হাসিবকে বিয়ে করেছে। এরপর ঈদের দ্বিতীয় দিন ডালিয়া আক্তার মধুখালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় নবদম্পতি হাসিব ও শ্রাবণী এলাকায় ফিরে আসেন। শ্রাবণীর মা মেয়েকে বুঝিয়ে বাসায় নিতে চাইলেও, শ্রাবণী স্বামীর কাছ ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তিনি মাকে স্পষ্ট জানান, “আমার স্বামী থেকে আলাদা করলে আমি আত্মহত্যা করব।”
শ্রাবণী আরও বলেন, “আমি প্রয়োজনে বিয়ে করেছি। পরিবারে একাধিকবার বিয়ের কথা বললেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি।” এসব বিবেচনা করে, শ্রাবণীর মা ডালিয়া আক্তার ০২/০৪/২০২৫ তারিখে দায়েরকৃত অভিযোগটি স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করেন।
এ বিষয়ে শ্রাবণীর প্রবাসী বাবা ও মা বলেন
ঈদুল ফিতরের দিনে আমার মেয়ে হাসিবের সাথে চলে যায়,আমি ঐদিন থানায় যাই ঈদের দিন থানার সবাই ব্যস্ত থাকে,আমি পরের দিন আবার থানায় যায়, দ্বিতীয় দিনে আমি একটি অভিযোগ করি। হাসিবের মাকে বলি ও এলাকার চেয়ারম্যানকে বলি তারা আমার মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে, আমি মেয়েকে আনতে গেলে মেয়ে কোনভাবেই আমার সাথে আসতে রাজি হয়নি।আমার মেয়ের কথা চিন্তা করে আমি থানা থেকে আমার অভিযোগটি প্রত্যাহার করি এবং এই মামলা উঠানোর খরচ বাবদ ৫০০০ টাকা দেয় ভাগিনা মাসুদের মাধ্যমে।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে, মা ডালিয়ার পরিকল্পনায়, পরীক্ষা শেষে হল থেকে মেয়েকে জোরপূর্বক ধরে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ও সংসারের টানাপোড়েনে শ্রাবণী মায়ের সঙ্গে যেতে রাজি হননি। তখন ডালিয়া আক্তার ফোন করেন ‘৯৯৯’-এ।
ত্রিপল নাইনের ফোন পেয়ে মধুখালীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রইসুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছেলে ও মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান এসআই শেখ তারিকুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাসিবকে অপহরণ মামলায় কারাগারে পাঠানো হয় এবং শ্রাবণীকে রাখা হয় তালাবদ্ধ ঘরে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে শ্রাবণী একাধিকবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চায় শ্রাবনীর মা ডালিয়া আক্তার কোনভাবেই কথা বলতে দেয়নি শ্রাবণীকে। তবে পিছন থেকে শ্রাবণী হাত নেরে দেখান আমার মা আমার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা কথা বলছে। যেমন ওর মাথা ঠিক নেই,অনেক অসুস্থ,ওকে নষ্ট করেছে ইত্যাদি।
মধুখালী থানার এসআই শেখ তারিকুল ইসলামের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় এবং ডালিয়া আক্তারের বক্তব্যের মধ্যে বেশ অমিল রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই শেখ তারিকুল ইসলাম ক্যামেরার সামনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উক্ত অপহরণ মামলার আসামি করা হয় হাসিবের বিধবা মা খাদিজা বেগমকে। খাদিজা বেগম বলেন আমি কখনোই ঘটনার সাথে জড়িত নই। শ্রাবণী আমার ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। সে যদি আমার ছেলের সঙ্গে না থাকতে চায়, আমি স্বেচ্ছায় তাকে যেতে বলব।”
তিনি আরও জানান, “থানা পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টির সমাধান করেছে, কিন্তু মেয়ে কোনোভাবেই স্বামী ছেড়ে যেতে রাজি হননি।শ্রাবনীর মা অভিযোগ থানা থেকে উঠায়ে নিছে,তাহলে আবার অভিযোগ করল কে।তারা খাসি খাবে বলে আমার কাছে টাকা চেয়েছিল আমি গরিব মানুষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।
খাদিজা বলেন, “শ্রাবণী এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসে ওর মা লোকজন নিয়ে তাকে বাড়ি নিতে চায়। কিন্তু সে যেতে রাজি না হওয়ায় ওর মা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়। আমি খবর পেয়ে থানায় যাই। এখন দেখি আমার নামে অপহরণ মামলা! আমি কাকে অপহরণ করেছি? আমি তো ঘটনার সাথে জড়িতই নই। আমি একজন বিধবা নারী। পুলিশ কেন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে? আমি এর সঠিক বিচার চাই।”
এই ঘটনার বিষয়ে মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী করা হয়েছে শ্রাবণীর মামাতো ভাই মাসুদকে,তিনি বলেন শ্রাবণী পালিয়ে যাওয়ার পর যখন ফিরে আসে, আমরা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে বসি শ্রাবণী কখনোই স্বামী ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি।ওর বাবা বিষয়টি মেনে নিয়েছিল তাই ওর মা অভিযোগটি প্রত্যাহার করেছে। এখন আবার শুনছি ও নাকি অপহরণ করেছে কিন্তু আমরা তো দেখলাম প্রায় এক দেড় মাস সংসার করতে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল পরীক্ষা শেষের দিন শুনেছি ওর মা ওকে নিয়ে বাড়ি আসতে চেয়েছিল কিন্তু শ্রাবণী আসে নাই। ওরমা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলেগে ওদেরকে থানায় নিয়ে যায়। এখন শুনে অপহরণ মামলা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল হুদা বাশার ০১৭১১২৫৩৬৭৬
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ রেজাউল করিম ০১৭১১৯২৯৪৭৩
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫