১২ লাখ হেকেছে ৩৫ মণের ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’

- আপডেট সময় : ১০:৫৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ ২৭ বার পড়া হয়েছে

রাসেল মোল্লা নড়াইল
ঈদুল আজহা সামনে রেখে নড়াইল সদর উপজেলার তারাপুর গ্রামের ‘চিত্রা অ্যাগ্রো’ খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বিশালদেহী একটি ষাঁড়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১১ ফুট এবং উচ্চতা ৬ ফুট। কুচকুচে কালো রঙের ষাঁড়টি জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ফ্রিজিয়ান সাহিওয়াল জাতের ষাঁড়টি শান্ত স্বভাব ও সুস্থ অবয়বের জন্য আলাদাভাবে নজর কাড়ছে।
প্রায় তিন বছর আগে যশোরের সাতমাইল হাট থেকে ৫০০ কেজির একটি ষাঁড় কিনেছিলেন চিত্রা অ্যাগ্রোর মালিক মিল্টন শিকদার। তখনই স্থির করেছিলেন—এটিকে বড় করে তোলাই হবে লক্ষ্য। স্নেহ, যত্ন আর পুষ্টিকর খাদ্যে ধীরে ধীরে বেড়েছে ষাঁড়টির গড়ন। শরীরের রঙ কুচকুচে কালো হওয়ায় ষাঁড়টির নাম রাখা হয় ‘ব্লাক ডায়মন্ড’। গত কোরবানির ঈদের আগে ওজন দাঁড়ায় ৯০০ কেজিতে। তখন বিক্রি করার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—আরও এক বছর রেখে দেখবেন কী হয়। সেই ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডের’ বয়স এখন প্রায় সাড়ে চার বছর। দাঁত ছয়টি, আর ওজন প্রায় ১৪০০ কেজি!
মিল্টন শিকদার বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে, কোনো ধরনের কৃত্রিম মোটাতাজাকরণ না করে ঘাস, খৈল, ভূট্টার গুঁড়া ও চিটাগুড় খাইয়ে ধীরে ধীরে ষাঁড়টিকে বড় করেছেন। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করলে এবং অতিরিক্ত খাবার দিলে ষাঁড়টির ওজন আরো অনেক বেশি হত। তবে তাতে শরীরে চর্বি বেড়ে যেত এবং ষাঁড়টি ঝিমিয়ে পড়ত। কিন্তু পরিমিত প্রাকৃতিক খাবার দেওয়ার কারণেই ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ সুঠাম দেহের অধিকারী এবং অত্যন্ত প্রাণবন্ত। কোরবানির জন্য যেমন পশু প্রয়োজন, তাঁর অনন্য উদাহরণ ‘ব্লাক ডায়মন্ড’।
তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর ষাঁড়টিকে আমরা সন্তানের যত্নে লালন-পালন করেছি। এ বছর ষাঁড়টি বিক্রি করার ইচ্ছা রয়েছে৷ তবে হাটে নিয়ে গিয়ে কষ্ট দিতে চাই না, খামার থেকেই বিক্রি করতে চাই। আমরা খুব বেশি লাভের কথা ভাবছি না। সুলভ মূল্য হিসেবেই ষাঁড়টির দাম ১২ লাখ টাকা চাচ্ছি।”
রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, তারাপুর গ্রামে বিলের ভেতর খোলামেলা পরিবেশে খামারটি তৈরি করা হয়েছে। এতে মোট ৬০ টি গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে খামারে ঢুকতেই টের পাওয়া যায় ব্লাক ডায়মন্ডের রাজকীয় উপস্থিতি। বিশাল দেহের অধিকারী ব্ল্যাক ডায়মন্ড দাঁড়িয়ে আছে অত্যন্ত শান্তভাবে। এছাড়া খামারে আরো ৫৬টি ষাঁড় এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেগুলো সাইজে ছোট থেকে মাঝারি সাইজের।
ষাঁড়গুলোর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা বলেন, খামারের সবচেয়ে বড় গরু ব্লাক ডায়মন্ড। তবে বিশাল দেহের অধিকারী হলেও ষাঁড়টি খুবই শান্ত প্রকৃতির। তবে কোনো কারণে রেগে গেলে ষাঁড়টিকে সামলাতে বেগ পোহাতে হয়। খামার থেকে বের করতে হলে ১৫-২০ জন লোকের প্রয়োজন হয়। ষাঁড়টি খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। অন্য সবার থেকে ষাঁড়টিকে বিশেষ যত্নে লালনপালন করতে হয়।
ষাঁড়টি দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন মানুষ। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, আবার কেউ দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছেন তার দেহের গঠন আর সৌন্দর্য।
ষাঁড়টি দেখতে আসা দর্শনার্থী রাসেল হুসাইন বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটা দেখে আসলাম। সামনে থেকে দেখে তো চোখই সরাতে পারছি না। এমন ষাঁড় জীবনে দেখিনি—একেবারে রাজকীয় চেহারা!”
নড়াইল সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, “ তারাপুরের খামারটিতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরুগুলোর স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা খুবই ভালো। খামারের সবচেয়ে বড় গরুটির নাম ‘ব্লাক ডায়মন্ড’। সেটিও খুবই আকর্ষণীয়। আমরা খামারির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি, ষাঁড়টি কাঙ্ক্ষিত দামেই বিক্রি হবে৷ ”